সাইকেল ভ্রমন ও হারিয়ে যাওয়া সুইটি

তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। আমরা সরকারী কলোনীতে থাকতাম। আমাদের বরাবর নীচতলায় এক ভাড়াটে থাকতো। তার একটা নতুন #ফিনিক্স #সাইকেল ছিলো। যদিও তখন আমরা ফনিক্স সাইকেল বলেই জানতাম। যাই হোক, উনার কাছ থেকে মাঝেমাঝে সাইকেল নিয়ে চালাতাম – কখনো সাইকেল দিতে মানা করতেন না। সাইকেল চালানো শিখেছি ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় – ভাড়ার সাইকেল দিয়ে। একসময় দুই হাত ছেড়ে সাইকেল চালানো যেনো কোনো ব্যাপারই ছিলো না।
আমার বাবা-মা দুইজনই চাকুরী করতো। তাই আমি আর আমার ছোট ভাই বাসায় সারাদিন মা ছাড়া একাই থাকতাম। বাসার বাইরে গেলে তালা দিয়ে যেতাম আর চাবিটা দিয়ে যেতাম নীচতলার অপর দিকের ফ্ল্যাটে। সেই ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে বেড়াতে এসেছিলো – আসলে একটা পারিবারিক সমস্যার কারনে থাকতেই এসেছিলো যেটা পরে জেনেছিলাম। ক্লাস সেভেনে পড়তো – নাম, #সুইটি। ওদের বাসায় সাদাকালো একটা টিভি ছিলো। আমরা প্রায়ই টিভি দেখতে যেতাম। #ম্যাকগাইভার সিরিজের কথাটাই এখন শুধু মনে পড়ে।
কিভাবে কিভাবে যেনো চোখে চোখে প্রেম হয়ে যায়। একসময় ওকে অঙ্ক দেখিয়ে দেবার দায়িত্ব কাঁধে চাপে। আনন্দ আর আমার দেখে কে। টেবিলের নীচে দিয়ে পায়ে পা লেগে যেতো প্রায়শই – হয়তো ইচ্ছে করেই!
সময় না বলে কয়ে দ্রুতই পেড়োতে থাকলো। আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলাম, আর সুইটি ক্লাস এইটে।
সুইটির বাবা মা’র মাঝে বিচ্ছেদ ঘটেছিলো – তাই ওকে রেখে গিয়েছলো ওদের বাসায় – আত্মীয় ছিলো কি না। সুইটির বাবা আবার বিয়ে করেছে। এবার মেয়েকে নিতে এসেছে। খবরটা জেনে মাথাই খারাপ হয়ে গেলো। একবার কথা যে বলবো সেই সুযোগও পেলাম না। বাসার সামনে রাস্তায় এক বন্ধুর (তিরাশিয়ান ডাক্তার বন্ধু) সাথে টেনশন দিয়ে পায়চারি করছি। একসময় দেখলাম ওর বাবা একটা রিকশা ডেকে এনেছে। রিকশায় উঠে বসেছে ওর বাবার সাথে আমার সুইটি – চোখ ছলছল…
কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। হঠাত সেই নীচতলার আংকেলের সাইকেলের কথা মনে পড়ে গেলো। সাইকেল চেয়ে নিলাম। আমার বন্ধুকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে আমিই চলিয়ে রিকসার পেছন পেছন যেতে থাকলাম। আপাতত উদ্দেশ্য একটাই – বাসাটা চিনে আসা।
রিকশা ছুটে চলেছে – কচুক্ষেত, ওয়ার্কশপ, ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের রাস্তা ধরে থার্ড গেইট… প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়… ফার্মগেইট… কাওরানবাজার… পেছন পেছন যাচ্ছি তো যাচ্ছি।সেরাটনের (ইন্টারকন্টিনেন্টাল) সামনে সিগনালে আঁটকে গেলেম। ওদের রিকসা এগিয়ে যাচ্ছে – দেখছি আর খেয়াল করবার চেষ্টা করছি যেনো হারিয়ে না যায়।
সিগনাল ছেড়ে দিলো – আমার সুইটির রিকশাটা হারিয়েই গেলো। খুঁজি আর খুঁজি, আর পাই না।
মনোকষ্ট নিয়ে ফেরত রওয়ানা দিলাম। এবার যেনো আর সাইকেল চালাতেই ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষন আমি চালাই, কিছুক্ষন বন্ধু চালায় – এভাবে পালা করে সাইকেল চালিয়ে ফিরে এলাম।
এরপর আর টিভি দেখতে যাওয়া হয়নি। হয়নি আর পায়ে পায়ে ছুঁয়ে দেখা – অন্যরকম ভালো লাগা। ম্যাকগাইভারের বাকি সিরিজগুলো অদেখাই রয়ে গেলো।
আজও সুইটিকে আর দেখা হয়নি। সেই বয়েসের সুইটিরা কি হারিয়েই যায়?
I’m Alam, a writer and mathematician with a passion for playing with words and numbers.