জুতা খুলি
হঠাৎ করেই শৈশব কৈশরে বন্ধুদের সম্মিলিত ইচ্ছায় “দেয়াল পত্রিকা” এর মত একটা ব্যাপার আবছা আবছা মনে পড়ে যায়। তখন আমরা দশম শ্রেণীতে পড়তাম অথবা সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। ৪০ বছর অধিক সময়কাল আগের ঘটনা আবছা আবছা তো হয়ে যাবেই। বন্ধু Rumi Alam কে ফোন করে দেয়াল পত্রিকার কথা বলে জানতে চাইলাম, তোর মনে আছে কিনা। ও জানায় যে ওর মনে আছে। আমি উৎসাহি হয়ে উঠলাম। জানতে চাইলাম দেয়াল পত্রিকাটি কোথায় লাগিয়ে ছিলাম এবং কে কি লেখা লিখেছিলাম। ওর যে এখনও এত কিছু মনে আছে সেজন্য নিজেরও খুশি খুশি লাগলো। ও জানালো, আর্ট পেপারের ওপর আমরা খুব কাছের বন্ধুদের কয়েকটা দেখা ছিল এবং সেটা আমাদের বাসার সামনে একটা বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম।
লেখার শিরোনাম “জুতা খুলি” দেখে তোমরা বন্ধুরা হয়তো মনে মনে ভাববে, এ আবার কেমন শিরোনাম। আসলে আমাদের যেই লেখাগুলো সেদিনের সেই দেয়াল পত্রিকায় লেখাগুলোর মধ্যে “জুতা খুলে” শিরোনামে একটা লেখা যুক্ত হয়েছিল যেই মজার হাসির গল্পটি আমার আনসার মামার কাছ থেকে শোনা। পুরো গল্পটা এখন আর মনে নেই তবে ভাসা ভাসা যতটুকু মনে আছে ততটুকু বলা যায়।
এক বোকাসোকা লোক ট্রেনে ভ্রমণের সময় তার নিকট আত্মীয় বলে দেন যে টিকিটটা যেন না হারায় অর্থাৎ সযত্নে রাখে। কোনভাবেই যাতে টিকিটটি না হারিয়ে যায় সেজন্য জুতার ভেতর টিকেট রেখে জুতা পায়ে দিয়ে ট্রেনে চেপে বসেছে। একসময় যখন টিটি এসে লোকটির কাছে টিকেট চাইতেই লোকটি বলে জুতা খুলি। টিটি বুঝতে না পেরে আবারো যখন টিকেট চায় তখন লোকটি একইভাবে বলে জুতা খুলি।
এই গল্পটির আর কিছু মনে নেই। তাই আমার আনসার মামাকে ফোন দেই। উনার দুইটা নম্বরই বন্ধ পাই। আমার মনে কেমন যেন একটা খচখচ করছিল। খালাতো ভাই বেলালকে ফোন দিয়ে মামার নম্বর জানে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করি। বেলাল ভাই জানায় যে, মামা বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন। আমি আমার মাকে ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করি তখন তিনি জানায় যে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে মামার মৃত্যুর এই খবর আর আমাকে জানানো হয়নি। আমার মনে হতে থাকে বছর তিনেক আগে মামার সাথে আমি ফোনে কথা বলেছিলাম। চির বিদায়ের দুই বছর পর আমি এই খবর পেলাম।
আমার কাফরুল স্কুলের বন্ধুর চির বিদায়ের খবর জানতে পারি তাও তিন মাস পর। নিয়মিত যোগাযোগ থাকে না বলেই কি এমনটা? জানার পর কাফরুলের অন্য বন্ধুদের কাছে ফোন দেই। ওরা জানেই না, ওরা যেন চেনেই না!
কালিকলম গ্রুপের সদস্য বন্ধু Kanta Urmi এর কথাও একদিন মনে পড়ে। ও গ্রুপে সক্রিয় নেই। আমি ফোন দেই কিন্তু দিনের পর দিন ফোন বন্ধ পাই। তারপর মেসেঞ্জারে আমি আরেকটা নম্বর খুঁজে পাই। সেই নম্বরটিতে রিং বেজে ওঠায় আমি কিছুটা খুশি হয়ে যাই। ওপর প্রান্তে একজন ভদ্রলোক ফোন ধরেন। আমি কান্তাকে চাইতেই একজনকে ফোনটা ধরিয়ে দিলেন। আমি কন্ঠ চিনতে পারিনা। তিনি আমাকে জানান যে, কান্তা প্রায় বছখানেক হলো মিসিং।
ফোন বুক ঘাটতে ঘাটতে ওয়াহিদ ভাইয়ে নম্বরটা দেখতে পেয়ে মনে হলো, অনেকদিন কথা হয়না। ফোন দিলাম। দেখি তিনটা নম্বরই বন্ধ। ওয়াহেদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় iPhone ও blackberry মোবাইল ফোনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়ার সময় থেকে। উনি iPhone ও blackberry মোবাইলের প্রতি দুর্বল ছিলেন। নতুন কোন মডেল আসলেই সেটা কিনতেন। যাই হোক তার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে পেয়ে কয়েকদিন পর আমি বৈশাখী টেলিভিশনের ল্যান্ডলাইন নম্বরটি জোগাড় করে ফোন দেই। অপর প্রান্তে যিনি ফোন ধরলেন তার কাছে ওয়াহিদ ভাইয়ের কথা বলাতেই তিনি বললেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। উনি তো মারা গেছেন দুই বছর হয়ে গেল।
মাঝেমধ্যেই কেন খোঁজ খবর নিলাম না? বছর কিংবা কয়েক মাস পরে চলে যাবার খবর না হয়ে কয়েকটা দিন কিংবা সপ্তাহ সময়ের পার্থক্য হতো। কথা বলি না, কথা হয় না এভাবেই দূরত্ব আরো বেড়ে যায়! আর আমাদের হাতে থাকে তখন পুরনো পেপার। জুতা খোলার পর কি হয়েছিল সেই খবর অজানায় মিশে যায়।
©আলম – ৭ জুলাই ২০২৪ইং, বিকেল ৫তো ২৫মি.
I’m Alam, a tireless seeker of knowledge, an occasional purifier of wisdom, and, coincidentally, a writer. I love to play with numbers and write occasionally.