Alam M

Web Designer

Blogger

Freelancer

Writer

IT Consultant

Photographer

Alam M

Web Designer

Blogger

Freelancer

Writer

IT Consultant

Photographer

Blog Post

ছেলে ধরা – জীবন থেকে নেয়া

April 17, 2025 MEMOIRS
ছেলে ধরা – জীবন থেকে নেয়া

ছেলে ধরা দেখেছিস? দেখতে কেমন রে? পুরোনো ঢাকার কলতাবাজার, লক্ষ্মীবাজারের পাশেই দোতলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতাম। দোতলায় উঠবার সিঁড়ি মনে হয় আজও গুনতে পারবো। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়কালের প্রায় পুরো সময়কালই ছিলাম। কিছু কিছু স্মৃতি এখনো মনে হয় দেখতে পাই, হয়তো পাই, কল্পনা কি? অল্প কিছুদিনের জন্য দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম। যাত্রাপথের আবছা আবছা স্মৃতি মনে পড়ে। যদি সময় সুযোগ হয় তবে মা’র কাছ থেকে ওই গল্পটা শুনে নিয়ে শেয়ার করবো।

বাড়িওয়ালার দুই ছেলে মেয়ে ছিলো। মেয়েটার নাম রোলি, আমার বয়েসি, ছেলেটা মনে হয় আমাদের বছর দুয়েকের বড় ছিলো। সম্ভবত ওর নাম তারু ছিলো। এখনো মনে আছে যে ওদের ঘরের সিলিং ফ্যানের বাটিটা ছিলো না, ফ্যানের কয়েল সব দেখা যেতো।

এখনো মনে আছে কাঠের চেয়ারগুলো চিৎ ও উপুর করে জোড়া দিয়ে দিয়ে তার উপর চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে ওর নিচে আমরা খেলা করতাম।

দেশ স্বাধীন হলো। তখনো ওদের ওখানেই ভাড়া থাকি। নীচতলায় বাইরের রাস্তার দিকে একটা হোমিওপ্যাথের ডিসপেন্সারি ছিলো। এখনো আছে কিনা জানিনা। বাসা থেকে বের হবার জন্য চিপা গলি্র মতো ছিলো।

কলতাবাজারেই কোনো একটা ইস্কুলে আমাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো। ইস্কুলের নাম আজ আর মনে নেই। তবে এটা মনে আছে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিলো আর আমাকে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত লিখতে দিয়েছিলো। যেই বেঞ্চে বসেছিলাম সেই বেঞ্চ এক্ষনো দেখতে পাই। মস্তিস্ক এতো কিছু মনে রাখে? ইস্কুলে সাতু দিতো সেটার কথা মনে আছে। স্যার আমাকে কোলে করে নিয়ে পড়াতো। ভাসা ভাসা সেই স্যারের কোলের কথা মনে পড়ে। একদিন বেরোবো খুঁজতে ওদের সবাইকে। কাউকে কাউকে পাবো, কেউ কেউ চলে গেছে কোথায় কে জানে কিংবা না ফেরার দেশে।

শীতকাল। সকালে বাসার গলির মাথায় কোট-প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা নিতান্তই গরীব ছিলাম। তারপরের আমার কোট-প্যান্ট ছিলো। পকেটে আট আনা পয়সা। অনেক বড়োলোক আমি! চার আনা দিয়ে বাকর খানি খেয়েছি, আর চার আনা দিয়ে একটা সোনালী আংগটি কিনে হাতে দিয়েছিলাম।

সেই সময় কেরোসিনের তেলওয়ালারা বাড়ি বাড়ি তেল দিয়ে যেতো। সকালে আমাদেরকেও তেল দিতে এসেছে। আমার মা, তারপর বাড়িওয়ালা তেলওয়ালেকে চিনতে পারেনি। তেলওয়ালা জানিয়েছিলো যে তার বড় ভাই অসুস্থ্য তাই সে তেল দিতে এসেছে। তেল দেবার জন্যে তেলের চারকোনা টিনগুলো নিয়ে যখন সে গলির মাথায় এসে আমাকে দেখে আর আমার হাতে একটা তেলের টিন ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, বাবু সামনে চলো, তেল দিবো। আমি না বুঝেই সাথে চললাম। অলি গলি দিয়ে লক্ষ্মীবাজারে গিয়ে রিকশা দিয়ে আমাকে নিয়ে লালবাগ কেল্লায় হাজির। এই সময়ের মধ্যে আমার হাত থেকে আংগটিটা খুলে নিয়েছি সোনার আংগটি মনে করে।

রিকশা থেকে নেমে আমাকে বললো নামো। আমি আর রিকশা থেকে নামলাম না। আমি বলেছিলাম, আপনি তেল নিয়ে আসুন আমি রিকশাতেই আছি। কয়েকবার পিড়াপিড়া মনে হয় করেছিলো, মনে নেই। তেলওয়ালা আমাকে রিকশায় বসিয়েই চলে যায়। রিকশাওয়ালা আমাকে নিয়ে বসে থাকে। যোহরের আজান পড়তেই রিকশাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার বাবা এখনো আসে না কেনো। আমি তখন তাকে বলে যে উনি আমার বাবা নন, আমাদের তেল দিবে বলে আমাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে। রিকশাওয়ালা সেদিন বুঝতে পেরেছিল যে আমাকে চুরি করে নিয়ে এসেছিলো। তারপর আমাকে বলেছিলো যে আমি বাসা চিনতে পারবো কিনা? আমি বলেছিলাম যে যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে নিয়ে গেলে আমি বাসা চিনতে পারবো।

এদিকে আমাকে খোজাখুজি শুরু করা হয়েছিলো। মাইকিং করা শুরু হয়েছিলো। থানায় জানানো হয়েছিলো। মা পাগোলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। মায়েরা এমনি হয়।

যাই হোক, রিকশাওয়ালা আমাকে সেখানে ফিরিয়ে আনতেই আমি রিকশা থেকে লাফিয়ে দে দৌড়। যে দিক দিয়ে দৌড়িয়েছিলাম, আজও দেখতে পাই রোদের আলোয় রাস্তার পাথর কনা। বাসায় ফিরতেই সে কি অবস্থা। আমাকে বসিয়ে আমার মাথায় চাল ঢেলেছিলো, সেই চাল ফকিরকে দেবার জন্য। আজব কুসংস্কার!

Tags: