কিরো – হাতের রেখা কথা বলে (শেষ পর্ব-২)
…সেদিন বেশিক্ষন আর পড়ানো হলো না। ফিরে আসার সময় খালাম্মা আমাকে ডেকে বইটা আবার আমাকে দিয়ে বললেন, বইটা নিয়ে যাও। এটা তোমাকে দিলাম।
বইটার একেবারে মালিক বলে যাওয়ায় আমার খুশি আর দেখে কে। আমি নতুন উদ্যমে বইটা আবার পড়া শুরু করলাম। বই পড়ি – নিজের হাত দেখি আর মিলাই।
আমি আর এক বন্ধু মিলে বাংলাবাজারে যাই। পুরোনো বইয়ের ভিড়ে হস্তরেখার বই খুঁজি। পেয়েও গেলাম অনেকগুলো বই। কিনে নিলাম সব। পুরোনো বই তাই বেশি টাকা গুনতে হয়নি।
বই পড়ি আর হাত দেখে বেড়াই। যখন কথা মিলিয়ে দিতে পারি তখন মনে হয় এইতো শিখে গেছি হাত দেখা, হাতের রেখা দেখে ভাগ্য বলে দেয়া।
ছাত্রদের পড়ানো শেষে খালাম্মার হাত আমাকে প্রতিদিনই দেখতে হতো এক কাপ চা খেতে খেতে। আমি তার অতীত বলে যাই একের পর এক – উনি বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। ফিরে আসবার সময় প্রতিদিন একটাই কথা বলেন, তুমি এসব কথা বলো কিভাবে। আমি মাথা নীচু করে বলি, জানিনা।
ইতোমধ্যে রেজাল্ট বের হলো। পাশ করলাম। কলেজে ভর্তি হলাম। টিউশনিটা ছেড়ে দিলাম। খালাম্মার হাত দেখার সমাপ্তি ঘটলো। তবে সুযোগ পেলেই কারো না কারো হাত আমি দেখেই চলেছি। এ এক অন্যরকমের নেশা। মানুষের অতীত বলে দেবার নেশা, ভাগ্য বলে দেবার নেশা।
একসময় কলেজ পাশ করলাম। ভর্তি হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম বর্ষে থাকতেই আমার ভারতে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছিলো। এটাই আমার এজীবনের একমাত্র বিদেশ ভ্রমন ছিলো মাত্র সাত দিনের জন্য। ফিরে আসার আগে আমি কোলকাতার বইয়ে দোকানে হস্তরেখার বই খুঁজতে থাকি। পেয়েও যাই অনেক বই। এবার পেয়ে যাই আরেক গুহার সন্ধান। সম্মোহন, হিপনোটিজম এর বই। বাংলা ইংরেজি দু’ধরনের বইই পেলাম। সেগুলোও কিনলাম। দেশে ফিরে এলাম একগাদা বই নিয়ে।
এবার দেশে ফিরে ভাগ্য বলে দেবার পাশাপাশি শুরু করি সম্মোহন চর্চা। আত্ম-সম্মোহন এবং দুর-সম্মোহন। এ গল্পটা না হয় অন্য কোনো আরেকদিন বলি।
সেই খালাম্মার সাথে পরে আর কখনো দেখা বা কথা হয়নি। আমিও যাইনি দেখা করতে। এগিয়ে গেছি সামনে। জীবনের পর্বগুলো এভাবেই সব রয়ে যায় পেছনে। আজও মাঝে মাঝে নিজের মনেই শুধু প্রশ্ন জাগে, – সেদিন কি সত্যি সত্যিই খালাম্মার হাতের রেখা কথা বলেছিলো, নাকি অন্য কিছু?